হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম
চিকিৎসা/হাসপাতাল সমাজসেবা এমন একটি কার্যক্রম যার মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ ও কার্যকর করে তোলা সম্ভব। যে সব সমস্যা রোগীর রোগ নিরাময়ে মানসিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত করে এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা গ্রহণে অসমর্থ করে সে সব সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণপূর্বক তা সমাধানে চিকিৎসক ও রোগীকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে রোগ নিরাময়ে সহায়তাদানই এ কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন রোগীকে তার শারীরিক, মানসিক তথা সর্বাঙ্গীন কল্যাণসাধনে সচেষ্ট করে তোলা সম্ভব হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমাজকর্ম একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রমের মধ্যে চিকিৎসা সমাজসেবা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৫৮ সালে এ কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ৯৪টি হাসপাতালে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের নির্দেশানুযায়ী গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সহায়তার জন্য চিকিৎসা সমাজসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৪92টি উপজেলায় উপজেলা হেল্থ কমপ্লেক্সে রোগীকল্যাণ সমিতি গঠন ও নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে যা সরাসরি আর্তপীড়িতের সেবায় সম্পৃক্ত।
কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যঃ
১. একজন রোগীর মনঃস্তাত্বিক বিষয়গুলির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে রোগীর সুস্থতাবিধানে মনোনিবেশ;
২. রোগীর সাথে বন্ধুত্বসুলভ ‘সম্পর্ক’ স্থাপন (Rapport building) করে তার সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক তথ্যাবলি সংগ্রহ করে রোগ নিরাময়ে রোগী ও চিকিৎসককে সহায়তা প্রদান;
৩. রোগীদের রোগ নিরাময় এবং চিকিৎসার বিষয়ে কাউন্সিলিং ও উদ্বুদ্ধকরণ;
৪. রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ;
৫. অশিক্ষিত, অজ্ঞ রোগীদেরকে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সর্বোপরি সব ধরনের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি;
৬. অশিক্ষিত ও দরিদ্র রোগীর মন থেকে রোগ সম্পর্কে কুসংস্কার, অহেতুক ভয়ভীতি দূর করে যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে গড়ে তোলা;
৭. প্রয়োজনবোধে দরিদ্র রোগীদের ঔষধ, রোগ নির্ণয়সংক্রান্ত পরীক্ষা (Test) পথ্য, রক্ত, চশমা, ক্রাচ, কৃত্রিম অঙ্গসহ অন্যান্য ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদান (চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী);
৮. হাসপাতালে পরিত্যক্ত অসহায় শিশুদের সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত বেবি হোমে (ছোটমণি নিবাস) ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া এবং আশ্রয়হীন, ঠিকানাহীনদের বিভিন্ন সংস্থা, হোমে পুনবার্সনের ব্যবস্থা করে দেওয়া;
৯. হাসপাতালে আগত বৃদ্ধ, অসহায়, প্রতিবন্ধীদের সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া;
১০. সহায়সম্বলহীন ও অসচ্ছল রোগীদেরকে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম, শহর সমাজসেবা কার্যক্রম, পল্লী মাতৃকেন্দ্র এবং সমাজসেবা অধিদফতর হতে নিবন্ধীকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা প্রদান;
১১. দেশের প্রবীণ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন/প্রতিবন্ধী) চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সে সকল রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান;
১২. রোগীর পারিবারিক সমস্যা নিরসন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়করণ, পরিবারের সাথে (পত্র, টেলিফোন) যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যয় নির্বাহে সহায়তা দান ও গৃহ পরিদর্শন;
১৩. হাসপাতালে অবস্থানকালীন চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা;
১৪. হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীর কেইস ফাইল লিখন, সংরক্ষণ ও অনুসরণ (যে সকল রোগীর বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে সমাজসেবা অফিসার সম্পৃক্ত) এবং
১৫. হাসপাতালে ভর্তিকৃত নামপরিচয়হীন, দরিদ্র, মৃত ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থা করা।
সেবাদান কেন্দ্রঃ
শেরপুর জেলা হাসপাতাল ও শেরপুর জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
যোগাযোগঃ
শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য হাসপাতালের ভিতরে অবস্থিত হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীদেরকে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস